বিশেষ প্রতিনিধি:
কথায় আছে- কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস। প্রচারনার দৌড়ঝাঁপ দেখে মনে হয় প্রয়াত কাউন্সিলর দিদারের মৃত্যুর প্রহর গুণছিল এইসব প্রার্থী, মৃত্যুর পরপরই শোক বার্তার পরিবর্তে নিজেদের প্রচার প্রচারনায় ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে এলাকাকে বিয়ের সাজে সাজিয়েছে ফেনী পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ডের এইসব সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদ প্রার্থীরা। এই যেন বেদনার সুরের আড়ালে মনের গহীনে আনন্দের আওয়াজ।
গত ২৫ মে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যবরণ করেন পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর নুরুল আলম দিদার।
সেদিন দিদারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল তার এলাকায়, সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত কমিশনারের আকস্মিক মৃত্যুর সংবাদে জনপ্রতিনিধি থেকে সর্বসাধারণ কেঁদেছিল সেদিন।
তার মৃত্যুর পরপরই পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ড বিশেষ করে রামপুর, মেহেদী সাঈদী, পশ্চিম মধুপুর-বিজয় সিংহ এলাকা ছাড়াও ফেনী পৌরসভার আনাচে-কানাচে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে যেন একাকার।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই কেউ কেউ নিজেকে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী আবার অনেকেই ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুন, পোস্টার বানিয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছে কাউন্সিলর দিদারের মৃত্যুর পরই এদের অনেককেই তারা নতুনভাবে চিনতে শুরু করেছে। যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থী মিলেমিশে যেন একই স্রোতে ভাসছে।
সচেতনমহল বলছে, প্রয়াত দিদারের শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয় ভূমিদস্যু, খুনি, মাদকাসক্ত, জুয়াড়ি, হাইব্রিড ও অর্থআত্মসাৎকারী এমন শ্রেণির মানুষদের বাদ দিয়ে সৎ ও নিষ্টাবান লোকদের জনপ্রতিনিধি করা সময়ের দাবি বলে জানান। এক্ষেত্রে সুষ্ঠ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেন অনেকে।
সূত্র বলছে, উপনির্বাচনটির জন্য প্রার্থীরা কেউ ধরাশায়ী দিচ্ছে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে, কেউবা ব্যক্তিবিশেষের তদবিরের অপেক্ষায়। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে সবাই রয়েছে নিজ নিজ কৌশলে।
এদিকে প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা ব্যানার ফেস্টুন ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নিজেদেরকে প্রচারণায় বেশ সর্গম রেখেছে। তাদের প্রচারনার ঢোল দেখে মনে হচ্ছে এই যেন বসন্তের কোকিলের সুর।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, এই ওয়ার্ডটির উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে অনন্ত ৬ জনের, যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলার আসামী, বিএনপি থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী, কেউবা মাদক ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত, এদের অনেকে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার কিংবা কেউ কেউ কূট কৌশলে টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িয়ে থাকার নানান অভিযোগ রয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়:
১। নাছির উদ্দিন বাবুল-
(হত্যা মামলাকে রাজনৈতিক দাবি করে, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করার আশ্বাস বাবুলের)
প্রার্থীদের মধ্যে নাম শুনা যাচ্ছে ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য নাছির উদ্দিন বাবুলের। যার নামে রয়েছে খুনসহ চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ। ফেনীতে আলোচিত খুরশিদ ও কামরুল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি, কূটকৌশলে বিশেষ ম্যানেজে চার্জশিট থেকে নিজের নাম সরিয়ে পেললেও একই মামালায় তার অন্য ভাইয়েরা আসামি রয়েছেন বলে জানাযায় । আসামী ও অভিযুক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল স্বীকার করলেও তার দাবী এটি অনেক পুরনো বিষয় এবং রাজনৈতিক মামলা। পরবর্তীতে একই হত্যা মামলায় ভাইদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এছাড়া দলীয়ে মনোনয়নে নির্বাচিত হলে অতীতের ন্যায় মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে একইভাবে কাজ করার কথাও জানান তিনি ।
২। জহির উদ্দিন-
(দল ভাগাভাগি করে ব্যবসা ও ক্ষমতায় আসতে মরিয়া জহির)
পরিবার ও ব্যবসা বাঁচাতে দলভাগ (বিএনপি-আওয়ামীলীগ) করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে চান বলে অভিযোগ রয়েছে জহিরের বিরুদ্ধে। তার বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন জেলা যুবদল নেতা। এছাড়া নেশা সেবন করার অভিযোগও রয়েছে এই বিতর্কিত নেতার বিরুদ্ধে। এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে জহির বলেন, তিনি সহ তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে, (দেলোয়ারের বিষয়ে) তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে দল করার অধিকার যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। নেশা সেবনের বিষয় এড়িয়ে গিয়ে, অবহেলিত ১৪ নং ওয়ার্ডে অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে জানান সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
৩। সামছুউদ্দিন মাসুম-
(জুয়ায় সবহারিয়ে কমিশনারের দৌড়ে মাসুম)
ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের নাম পুঁজি করে এলাকায় সাল্লিশ বাণিজ্যে থেকে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে সামছুউদ্দিন মাসুম ওরফে (জুয়া মাসুমের) বিরুদ্ধে। এছাড়াও জোর পূর্বক জায়গা দখলের ও অভিযোগ রয়েছে বলে অনেকেই জানায়। অভিযোগের সত্যতা জানতে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
৪। আবদুল কাদের শিপন-
(ব্যালেন্স রাজনীতি করে সম্পদ গড়ার অভিযোগ শিপনের বিরুদ্ধে)
বিরোধী দলের সাথে আঁতাত করে স্বদলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে কোনঠাসা রেখে স্বজন ও বিরোধীয় নেতাকর্মীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যালেন্স করার অভিযোগ ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি শিপনের বিরুদ্ধে। এছাড়াও দাফট খাটিয়ে সাল্লিশ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পত্তি গড়ার কথাও জানান অনেকে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে শিপন একবাক্যে অভিযোগসমূহ অস্বীকার করেন। ওয়ার্ডে তার কোনো স্বজন নেই বলেও দাবী করেন। আঁতাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন যদি হতো তাহলে তাদের সাথে নির্বাচনে সংঘর্ষ হতো না।
৬। জাকির হোসেন-
( ভদ্রতার আড়ালে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জাকিরের বিরুদ্ধে)
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকিরের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৪ নং ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর নুরুল আলম দিদারের কাছ থেকে ধার নেওয়া কয়েক লক্ষ টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ। পরিবারের কাছে পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস না থাকায় ভদ্রতার মুখোশটাই যেন সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে । এছাড়াও পদ-পদবীর প্রলোভন দেখিয়ে দলীয় কর্মীদের নিজের স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহারের গুঞ্জন রয়েছে। জানা যায়, রাজনীতির মাত্র ৩ বছরের ক্যারিয়ারে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ্য এবং শীর্ষ নেতাদের নজরে আসেন। এতে পদবঞ্চিত, ত্যাগী ও নির্যাতিতরা সহ প্রবীন নেতাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগের সত্যতা জানতে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
৭। দেলোয়ার হোসেন মিলন-
(আলোচনায় থাকতে সব নির্বাচনেই প্রার্থী হন মিলন)
শুধুমাত্র হাইলাইট এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরবর্তীতে সমঝোতার মাধ্যমে ম্যানেজ হয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা দেলোয়ার হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে । পৌর নির্বাচনেও এর আগে কাউন্সিলর হওয়ার জন্য প্রার্থী হয় এই মিলন, তবে ঐ নির্বাচনের আগমুহুর্তে শেষরাতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান বলে স্থানীয়রা জানায়।
প্রায় ৬ হাজার ভোটারের ভাগ্য কার হাতে নির্ধারণ হতে যাচ্ছে এটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৪ নং ওয়ার্ডের উপনির্বাচন পর্যন্ত।